উইকেট নেওয়ার পর তাসকিনের উৎযাপনটা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। মনে হয় যেন বিশাল কোনো অ্যালবাট্রোস নীল সমুদ্রের বুকে পাখা মেলে দিয়েছে। রাজকীয় ভঙ্গিতে বাতাস কেটে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। তাসকিন আহমেদ ২২ গজের এলবাট্রস হতে চেয়েছিলেন। গতি আর ইয়র্কারের তোপে শিকার তুলেছেন বারবার।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে নিজেকে প্রমাণ করেছেন অনন্য এক যোদ্ধা হিসেবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে আগমনের গল্পটা ছিল রুপকথার রাজকুমারের মতো। সেই রুপকথার রাজকুমার এবং বাস্তব জীবনের একজন যোদ্ধা তাসকিন আহমেদের জীবনের উস্থান-পতন সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে ক্রিকেট টুডের এবারের প্রতিবেদনে।
তাসকিন আহমেদ ৩ এপ্রিল, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বামহাতি ব্যাটসম্যান ও ডানহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে দলে খেলে থাকেন। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে তিনি টি- ২০ আন্তর্জাতিক ও ওডিআই ম্যাচ খেলে থাকেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট এবং লিস্ট এ ক্রিকেট মেট্রোপোলিশ দলে খেলেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে চিটাগং কিংস দলে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ এ ক্রিকেট দল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একাদশ, বাংলাদেশ অনূধ্ধ ১৯ দলে খেলেছেন। ২০০৭ সালে ২৮ মার্চ ডাম্বুলায় প্রতিপক্ষ শ্রীলংকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পঞ্চম বোলার হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হ্যাট্রিক করেন।
অক্টোবর, ২০১১ সালে ঢাকা মেট্রোপোলিশের হয়ে বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে তাসকিনের প্রথম- শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ব্যাক্তিগত দ্বিতীয় টি-২০ খেলায় চিটাগং কিংসের হয়ে অংশগ্রহণ করে দুরন্ত রাজশাহীর বিপক্ষে ৩১ রানে ৪ উইকেট লাভ করেন ও ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন। নিয়মিতভাবে ঘন্টায় ১৪০ কি.মি. গতিতে বোলিয়ে পারদর্শী তিনি।
বোলিং অ্যাকশন ক্রটিযুক্ত হিসেবে আন্তজার্তিক ক্রিকেটে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হন তাসকিন। ১৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে আইসিসি কতৃপক্ষ আরাফাত সানি ও তাসকিনের বোলিং অবৈধ বলে তাদের ওয়েবসাইটে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এতে তাদের দুজনেরই কনুই ১৫ ডিগ্রির বেশি বেকে যায় বলে জানায়। বিশ্বকাপ টি-২০ চলাকালীন তার জায়গায় বাংলাদেশ দলে স্থান পান শুভাগত হোম। তাহকিনের বোলিং অবৈধ ঘোষনায় বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনে সমালোচনার রুপান্তরিত হয়। এ নিয়ে সরব প্রতিবাদ করেছেন সাবেক ক্রিকেটাররাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রীড়ামোদীরা আইসিসি এ সিদ্ধান্ত ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখেছেন। তাসমিনের বোলিং পরীক্ষা নিয়েও গনমাধ্যমে নানা সন্দেহ প্রকাশিত হয়েছে।
আন্তজার্তিক ক্রিকেট, ১ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্ব টি-২০ প্রতিযোগিতায় সুপার টেন পর্বে অস্টোলিয়ার বিপক্ষে টি-২০ আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটে তার।
২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে তার ওয়ান্ডে অভিষেক হয়। খেলায় তিনি ৫ উইকেট লাভ করেন। একমাত্র বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে তিনি অভিষেক ওয়ান্ডেতে ৫ উইকেট নেন।
২০১৫ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ৪ জানুয়ারী, ২০১৫ তারিখে বিসিবি বাংলাদেশ দলের ১৫ সদস্যের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে তিনিও দলের অন্যতম সদস্য মনোনীত হন। ৫ মার্চ, ২০১৫ তারিখে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ৪র্থ খেলার তিনি ৪৩ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট দখল করেন। ঐ খেলায় বাংলাদেশ দল বিশাল রান তাড়া করে ৬ উইকেট কৃতিত্বপূর্ণ জয়লাভ করে।
১২ জানুয়ারী, ২০১৭ তারিখে নিউজিল্যান্ড সফর করেন। এ সফরেই ওয়েলিংটনে ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত ২ টেস্টের সিরিজে ১ম টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শুভাশিস রায়ের সাথে তারও টেস্ট অভিষেক হয়।
এরপর থেকে তারও লোড়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের পক্ষে অনন্য যোদ্বা হিসেবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।