কারো কাছে তিনি মি. ডিপেন্ডেবল। কারো কাছে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। কেউ বলে নেভার সেলিব্রেট বিফোর ইউ উইন। বয়স তখনো সতের হয়নি, দেখতে মনে হতো তার থেকেও অল্প। তার ব্যাটিং ইংল্যান্ডে এমনই আলোড়ন তুলেছিলো যে, ছবির ক্যাপশনে লেখা, ‘লিটল ওয়ানডার’ বলছিলাম মুসফিকুর রহিমের গল্প। মূলত তিনি একজন উইকেট রক্ষক। ছোটখাটো গড়নের এই সদা হাস্যেজ্জল খেলোয়াড়টি সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে ক্রিকেট টুডের এবারের প্রতিবেদনে।
মোহাম্মদ মুসফিকুর রহিমের জন্ম ৯ মে, ১৯৮৭। তার বাবার নাম মাহবুবুর হাবিব ও মাতার নাম রহিমা খাতুন। তিনি বগুরা জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করেন। ক্রিকেট খেলার সময়, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে অধ্যায়ন করেন।
২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে মুসফিক প্রথমবারের মত জাতীয় দলে সুযোগ পান। ইংল্যান্ডের মাটিতে এটি ছিলো বাংলাদেশের প্রথম সফর। অপরিচিত পরিবেশ মোকাবেলায় তাই বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের যথেষ্ঠ ভুকতে হয়। প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলে মুসফিক পরিবেশের সাথে ধাতস্ত হয়ে নেন। যার প্রমাণ সাসেক্সের বিরুদ্ধে তার ৬৩ রানের ইনিংস এবং নটিংহ্যামশায়ারের বিরুদ্ধে করা অপরাজিত ১১৫* শুরুরদিকে যদিও তাকে কেবল উইকেট কিপার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল, গা গরমের ম্যাচগুলোতে তার ক্রীড়া প্রদর্শনদের নির্বাচকদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। ফলশ্রুতিতে লর্ডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তিনি স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান হিসেবেই দলে জায়গা করে নেন। ১৬ বছর বয়সী এই তরুণ প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৯ রানেই প্যাভিলিয়নে ফেরত যায়।
২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মুসফিক বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেন। অন্যান্যদের মধ্যে এই দলে ছিলেন ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক তারকা সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল, মুসফিকের নেতৃত্বে দলটি কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে সমর্থ হয়।
২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে মুসফিক আাবার জাতীয় দলে সুযোগ পান। এই ট্যুরে তার সাথে সাথে ফরহাদ রেজা এবং সাকিব আল হাসানেরও ওয়ান্ডে অভিষেক হয়। হারাতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে মুসফিক তার প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি করেন এবং পরের বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের জন্য খালেদ মাসুদের স্থলাভিত্তিক হন।
জুলাই ২০০৭ সালে শ্রীলংকার বিরুদ্বে দ্বিতীয় টেস্টে মুসফিক আবার দলে ডাক পান। এক ইনিংস এবং ৯০ রানের বিশাল ব্যবধানে বাংলাদেশ পরাজিত হয়। মুসফিক, মোহাম্মদ আশরাফুলকে সঙ্গী করে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রেকর্ড ১৯১ রান করেন। ৮০ রানের একটি চমৎকার ইনিংস খেলেন মুসফিক।
২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপে অনবদ্য ৭১ রানের ইনিংসের জন্য বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্থান ম্যাচে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরুস্কার লাভ করেন।
২০০৯ এ জিম্বাবুয়ে সফরে মুসফিক বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হন। তৎকালীন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় সাকিব আল হাসান তার স্থলাভিত্তিক হন এবং সহ-অধিনায়ক সাকিবের দায়িত্ব পান মুসফিক। ২০১০ এর ২১ জানুয়ারী ভারতের বিরুদ্বে হোম সিরিজের প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনে মুসফিক তার ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। মাত্র ১১২ বলে সেঞ্চুরি করে তিনি বাংলাদেশের দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক হন। ১১৩ রানের ব্যবধানে ভারত ম্যাচটি জিতে নেন। ঐ বছরের ৮ নভেম্বর ওয়ান্ডেতে মুসফিক তার সেরা ইনিংসটি খেলেন। জাতীয় ক্রিকেট লীগের একটি ম্যাচে তিনি রাজশাহীর হয়ে ১১৪ বলে ১২০ রান করেন। ডিসেম্বর ২০২০ এ মুসফিকের জায়গায় তামিম ইকবাল সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পান।
২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে নিজেদের সেরা সাফল্য রানার্সআপ হয়।
টেস্ট ক্রিকেটে মুসফিকের অধিনায়কত্বেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড,অস্টোলিয়া ও শ্রীলংকাকে পরাজিত করে।
৯ মার্চ, ২০১৫ তারিখে অ্যাডিলেড ওভালে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বের খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ম উইকেটে ১৪১ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন।
এছাড়া প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে মুশফিকুর রহিম আইসিসির প্লেয়ার অব দ্যা মান্থ ( মে, ২০২১) খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি ২০২১ সালের মে মাসে শ্রীলংকার বিপক্ষে তাদের মাটিতে একটি টেস্ট ও দেশের ভেন্যুতে তিনটি ওয়ান্ডে খেলেন। ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।