যে দেশ ঋনী করিলো চেনাতে মোর নাম, তাহার কল্যান ঘিরেই সে নাম তুলে নিলাম। ফিরে আসার গল্প লিখবো জয়ের করে, বিজয়ের নিশান তুলে ধরবো উচু আরও উচু করে, এই কথা দিলাম। তাকে বলা হয় দেশসেরা অপেনার, সানাথ জয়াসুরিয়ার মত পৃথিবীর সেরা অপেনারদের সাথে তুলনা যার। তিনি অসামান্য, তিনি নির্ভীক, যিনি মজবুত করেন জয়ের ভীত। সাদা দেয়ালের মাঝে কঠিন পিচের ভাঁজে, বাংলার ক্রিকেট মানচিত্রে তামিমকেই তো সাজে!
বাংলাদেশের এই দুর্দান্ত ক্রিকেটারের জীবনী ও ক্যারিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে ক্রিকেট টুডের এবারের প্রতিবেদনে।
তামিম ১৯৮৯ সালের ২০ মার্চ চট্রগ্রামের কাজীর দেওরিতে বিখ্যাত খান পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবা ইকবাল খান ও মা নুসরাত ইকবাল। তার বাবা ছিলেন ফুটবলার ও ক্রিকেটার। ২০০০ সালে মারা যান তিনি। বড় ভাই ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল। ক্রিকেটার আকরাম খানও তার চাচা।
২০০৭ সালে তামিম ইকবালের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে এবং একই বছর তিনি তার প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলেন। তিনি ডিসেম্বর ২০১০ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১১ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সহ অধিনায়ক ছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই তার সেঞ্চুরি রয়েছে এবং প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করেন।
২০১৮ সালে জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয়ও সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন এবং সেই সাথে রানাহিংসে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সানাথ জয়াসুরিয়ার করা ২৫১৪ রানের রেকর্ড ভেঙ্গে একই ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের অধিককারী হিসেবে নিজের নাম লেখান।
২ মে, ২০১৫ তারিখে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ১ম টেস্টের ২য় ইনিংসে ইমরুল কায়েসকে সঙ্গে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৩১২ রান তোলেন।
বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এটি ২য় সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন। এর ফলে তারা টেস্টের ২য় ইনিংসে ১৯৬০ সালে কলিন কাউড্রে ও জিওফ পুলারের গড়া ২৯০ রানের রেকর্ড ভঙ্গের মাধ্যমে নতুন রেকর্ড গড়েন। খেলায় তিনি ২০৬ রান করেন যা তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ টেস্ট শতরান। এ রান সংগ্রহের ফলে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের গড়া সর্বোচ্চ ২০০ রানের রেকর্ড ভঙ্গ করে নিজের করে নেন। পরবর্তীতে সাকিবের দূঢ়তাপূর্ণ অপরাজিত ৭৫* রানের সুবাদে তার দল ৫৫৫/৬ তোলে ও খেলাটি নিষ্প্রাণ ড্রয়ে পরিণত হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরুস্কার হিসেবে দেড় হাজার মার্কিন ডলার লাভ করেন।
১০-১৪ জুন, ২০১৫ তারিখে সফরকারী ভারত দলের বিপক্ষে তামিম ইকবাল বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হন। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বৃষ্টিবিঘ্নিত একমাত্র টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনি এ কীর্তিগাথা রচনা করেন।
২০২০ সালে ৮ মার্চ মাসরাফির অবসর গ্রহণের পরে তামিমকে বাংলাদেশের একদিনের আন্তর্জাতিক দলের অধিনায়ক ঘোষনা করা হয়।
তামিম ইকবাল ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ টি ২০ বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সেঞ্চুরি করেন। তিনি বাংলাদেশের হয়ে এক হাজার ক্লাবে পৌছান।
বর্তমানে তিনি টেস্ট,ওডিআই ও টি টোয়েন্টি মিলিয়ে বাংলাদেশী হিসেবে সর্বোচ্চ রানের অধিকারী খেলোয়াড়। তিনি ২য় বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ৩০০০ রান ও ওয়ান্ডেতে ৫০০০ রানের রেকর্ডধারী এবং ১ম বাংলাদেশী হিসেবে টি -২০ তে ১০০০ রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন। তিনি ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে ২০০ তম একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিলেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তামিম ইকবাল প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ২০১৯-২০ ক্রিকেট লীগ টুর্নামেন্টে ইস্ট জোন টিমের হয়ে ১ম শ্রেণির ক্রিকেটে অপরাজিত ৩৩৪ রানের ইনিংস খেলেন।
বাংলাদেশের এই দুর্দান্ত ক্রিকেটার দারুন ফর্মে আছেন। বাংলাদেশ তার কাছ থেকে আরও অনেক কিছু আশা করছে। আশা করি তিনি আপনাদের হতাশ করবেন না।